শাহীনুর ইসলাম ধ্রুব নয়ন:
সাভারে চুরির অপবাদে শিশু গৃহকর্মীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসক দম্পতির বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ওই দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে সাভার মডেল থানা পুলিশ। এছাড়া শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুর মা বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এর আগে, শুক্রবার গৃহকর্মী শিশুটি অসুস্থ হয়ে পরলে তাকে রাজাশন এলাকায় তার বাবা-মায়ের কাছে দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিত শিশুটির মা।
অভিযুক্তরা হলেন, সাভারের রাজাশন এলাকার কাজী ইসমাইল ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন পরশ। কাজী ইসমাইল বরগুনা সদর হাসপাতালে সহকারী সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন। ভুক্তভোগী শিশু সাভারের রাজাশন এলাকার ভাড়াটিয়া আনোয়ার হোসেনের মেয়ে। তারা সাভারের বিরুলিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
অভিযোগে বাদি উল্লেখ করেছেন, কাজী ইসমাইল ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন পরশ ভুক্তভোগী শিশু মিমের পরিবারের পূর্ব পরিচিত। এই সুবাদে মিমকে গৃহকর্মী হিসাবে কাজে নেয় তারা। গত ১ বছর কাজ করার পরেও মিমের বেতন ঠিকমত দেয় না অভিযুক্ত দম্পতিরা। সেই বেতনের টাকা চাইলে শিশুটিকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেন অভিযুক্তরা। নির্যাতনের বিষয়টি শিশুর পরিবার যাতে না জানতে পারে সে জন্য তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য করে ওই দম্পতি।
পরে শুক্রবার ভুক্তভোগী শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করে ভয়ভীতি দেখায় আটকরা। এক পর্যায়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুটিকে ভর্তি করে থানায় অভিযোগ করে ভুক্তভোগীর পরিবার।
ভুক্তভোগী শিশু মিম জানান, ওই বাসায় যাওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন তারা আমাকে আদর করেছে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরই আমাকে মারধর করতে থাকে। সর্বশেষ আমাকে চুরির অপবাদ দিয়ে ছোট ছুরি দিয়ে সারা শরীরে খুঁচিয়ে নির্যাতন করেছে। এছাড়া ব্যাট দিয়ে পায়ে ও মাথায় আঘাত করেছে। আমি নাকি দুই হাজার এক হাজার টাকা চুরি করে আমার মায়ের কাছে দিয়েছি। এমন অপবাদ দিয়ে আমাকে প্রায় প্রতিদিন মারধর করেছে। পরে আমাকে আমার বাড়িতে দিয়ে বাবাকে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা। আজ দুপুরে কিছু লোক বাসায় গিয়ে আমাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, ভুক্তভোগীর সারা শরীরে নতুন ও পুরাতন ভোতা এবং ধারাল অস্ত্রের ক্ষত রয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত সে হাসপাতালে ভর্তি থাকবে।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন্স) নয়ন কারকুন গণমাধমকর্মীদের জানান, খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে গিয়েছি। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি নির্যাতনের শিকার শিশুটির সারা শরীরে নতুন ও পুরাতন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের আটক করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
Leave a Reply